শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২৮ অপরাহ্ন
মোঃ রুম্মান হাওলাদার মঠবাড়িয়া প্রতিনিধি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের ৭০ বয়স উর্ধ্ব দুই গৃহহীন বৃদ্ধা মোঃ রত্তন আলী ও মোঃ ইসহাক। পেশায় একজন দিনমজুর ও অন্যজন ভিক্ষুক। প্রায় ৪০ বছর ধরেও হতদরিদ্র,গৃহহীন,ভাসমান অসহায় এ দুই বৃদ্ধার কপালে জুটেনি একখানা বাসযোগ্য নিজ গৃহ। অথচ প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উদ্যোগে বর্তমানে গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগসহনীয় গৃহ নির্মাণ করে দেওয়ার কথা থাকলেও হতদরিদ্র বৃদ্ধা রত্তন আলী ও ইসহাকদের কপালে জোটে না বাসযোগ্য কোন গৃহ।
মোঃ রত্তন আলী (৭৮) হতদরিদ্র একজন দিনমজুর। অন্যের জায়গায় ভাসমান অবস্থায় থেকে জীবন-জীবিকা পার করে আসছে। যখন যে কাজ পায় দিনমজুর হিসেবে সে কাজ করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করে। বয়স বেশি থাকার কারণে কেউ কাজে নিতে চায় না। আবার নিলেও সঠিক পারিশ্রমিক পান না। গৃহহীন রত্তন আলী এতদিন যে দুই হাত দিয়ে পরিশ্রম করে পরিবারের আয়-রোজগারের চাকা সচল রাখত সে হাতও আজ সচল নেই। গত চার মাস আগে খাবারের সন্ধানে কাজ করতে গিয়ে বাম হাতের কব্জি ভেঙে যায়। টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা নিতে পারছে না। ছেড়া গামছা দিয়ে গলার সাথে হাত বেঁধে মানুষের দ্বারে দ্বারে চিকিৎসার জন্য ঘুরে বেড়াচ্ছে। সুচিকিৎসার অভাবে আজ তার বাম হাতটি প্রায় পঙ্গুর পথে। এই বৃদ্ধের সাথে কথা হচ্ছিল মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজের পিছনে নাসিরের দোকানে বসে। ভাঙ্গা হাতের কব্জি ও পাঁচটি আঙ্গুল ফুলে ওঠায় হাতের উপরে কখনো মাছি উড়ে এসে পড়ছে। তা আবার অন্য হাত দিয়ে কষ্ট করে তাড়িয়ে দিচ্ছে। এমন দৃশ্য দেখে বৃদ্ধাকে জিজ্ঞেস করা হলো চাচা আপনার হাতে কি হয়েছে? রত্তন আলী দু-চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে জানায়, “টাকার অভাবে আজ আমি হাতের চিকিৎসা নিতে পারছিনা। হাত ভালো না থাকায় কাজও করতে পারছিনা। প্রায় বেশ কয়েকদিন ধরে অনাহারে। আমার থাকার কোনো ঘর নেই, অন্যের জায়গায় ভাসমান অবস্থায় থাকি। এ দুই হাত দিয়ে আয় রোজগার করে এতদিন জীবন কাটিয়েছি। আজ হাতটিও আমার ভেঙে গেল। মাথাগোঁজার ঠাঁই নেই, চিকিৎসা নেই তাই দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াই।
একই ওয়ার্ডের আর এক বৃদ্ধা হতদরিদ্র ইসহাক (৭৩) এর স্ত্রী সন্তান কেউই নেই। প্রায় ৪০ বছর ধরে ভিক্ষা করে জীবন কাটাচ্ছে। গৃহ না থাকায় এতদিন মঠবাড়িয়া সরকারি কলেজের বারান্দায় গিয়ে রাত্রি যাপন করতো। এখন কলেজের চারদিকে সীমানাপ্রাচীর ও রাতে গেট তালা বদ্ধ থাকায় আগের মত এসে ঝাপটি মেরে রাতে থাকতে পারেন না। ফলে বাধ্যহয়ে পথে ঘাটে যেখানে ঠাইপায় সেখানেই জীবন পার করে দেয়। বর্তমানে কলেজের পিছনে অন্যের একটি জায়গায় ঝাপটি মেরে থাকে। কলেজের পিছনে ৬ নং ওয়ার্ডের উত্তর কলেজ পাড়ায় যে কেউকে জিজ্ঞেস করলে ইসহাককে গৃহহীন ভাসমান ইসহাক হিসেবে চিনবে। স্ত্রী ও সন্তান না থাকায় মানুষের বাড়ি গিয়ে খাবার চেয়ে খান। যেদিন খাবার পায় না সেদিন অনাহারে দিন কাটান। বয়সের ভারে ঠিকমত গুছিয়ে কথা বলতে পারেন না। কথা বলতে গেলে জড়তা আসে। চোখেও ঠিকমত দেখতে পান না। এমন বয়সে চিকিৎসা নেই ,গৃহ নেই এ কেমন জীবন। করোনার প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে সব কিছু আটকে গেছে।চিকিৎসক তো দূরের কথা দুবেলা-দুমুঠো আহারই ঠিকমত জোটে না। বয়সের ভারে নুয়ে যাওয়া ইসহাক আলী দের জীবন আর চলছে না।
গৃহহীন ৭০ বয়স উর্ধ্ব এ দুই অসহায় হতদরিদ্র বৃদ্ধার দাবি জীবনের শেষ বয়সে এসে, শেষ ঠিকানায় পাড়ি জমানোর আগে সুচিকিৎসা নিয়ে অত্যন্ত নিজের একটি গৃহে জীবন কাটানোর।